সৌদি আরব ও বাংলাদেশ পারস্পরিক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে কাজ করছে : ধর্মমন্ত্রী

বক্তব্য রাখেন ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

লিয়াকত হোসাইন লায়ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ইসলামপুর, বাংলারচিঠিডটকম

ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে কিছু অপতৎপরতা সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের সকলকে কঠোর হস্তে দমন করেছেন। বাংলাদেশের মানুষ ধার্মিক, ধর্মান্ধ নয়।

২ জুন রবিবার জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় মো. ফরিদুল হক খান দুলাল অডিটোরিয়ামে ধর্মীয় ও নৈতিকতা উন্নয়নে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের অবদান, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, নারী নির্যাতন, যৌতুক, বাল্যবিবাহ ও মাদক প্রতিরোধে উলামা-মাশায়েখগণের করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

ধর্মমন্ত্রী বলেন, কিছু বিপথগামী কখনো জেএমবি, কখনো হরকাতুল জিহাদ, কখনো আল্লাহর দল ইত্যাদি নামধারণ করে দেশের সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে তাদের বিরুদ্ধে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এ দেশের জনগণ জঙ্গিদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। আর যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।

ধর্মমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ জনসংখ্যার বিবেচনায় বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। বর্তমানে এদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলমান। আর সৌদি আরব হলো মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মভূমি এবং আল্লাহর ঘর কাবা ও মসজিদে নববীসহ মুসলিম ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নানা স্মৃতিবিজড়িত একটি পূণ্যভূমি। আমাদের দেশের মুসলমানদের ধর্মীয় আবেগ ও অনুভূতির সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। সৌদি আরবের মানুষের প্রতি আমাদের বিশেষ সম্মান ও শ্রদ্ধা রয়েছে।

সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ধর্মমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরব আমাদের প্রধান শ্রম বাজার। সেদেশে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা সর্বাধিক। আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি রেমিট্যান্স এবং আমাদের সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আসে সৌদি আরব থেকে। অন্যদিকে, সৌদি সরকার কর্তৃক গৃহীত ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের শ্রমিকগণ অন্যতম ভূমিকা রাখছে। এভাবে আমরা ভাতৃপ্রতিম দু’টি দেশ পারস্পরিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে কাজ করছি।

জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসেফ ঈসা আল দুহাইলান, সংসদ সদস্য মো. আব্দুর রশিদ এমপি, নূর মোহাম্মদ এমপি, ধর্ম সচিব মুঃ আঃ হামিদ জমাদ্দার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মহা. বশিরুল আলম, পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জামাল আবদুন নাছের বাবুল ও জামালপুর আইন কলেজের অধ্যক্ষ আইনজীবী আব্দুস ছালাম।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ সৌদি আরবের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করে সৌদি সরকার ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছে। আমাদের এই ভিশন বাস্তবায়নে বাংলাদেশের শ্রমিকগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। তিনি বাংলাদেশের শ্রমিকদেরকে কঠোর পরিশ্রমী ও নিষ্ঠাবান হিসেবে উল্লেখ করেন।

বক্তব্য রাখেন সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসেফ ঈসা আল দুহাইলান। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এদেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের কার্যক্রম শুরু হয়। তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর খেদমতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩০০টির নির্মাণ কাজ শেষে শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। সরকারি অর্থায়নে এরূপ বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প সারাবিশ্বে অনন্য, যেটি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা করে দেখিয়েছেন।

ধর্মমন্ত্রী বলেন, সৌদি রাষ্ট্রদূতের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সৌদি সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশের আটটি বিভাগীয় শহরে আটটি এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকার পূর্বাচলে একটি মোট নয়টি আইকোনিক মসজিদ স্থাপিত হতে যাচ্ছে। এছাড়া, সৌদি সরকার ঢাকায় এরাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট স্থাপন করতে যাচ্ছেন। মন্ত্রী এসকল কার্যক্রম বেগবান করার জন্য সৌদি রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানান।