জামালপুরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ২৩৯

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শিশু জুবায়দুল তার মায়ের কোলে। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠি ডটকম

জামালপুরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। গত সাতদিনে জামালপুর সদর হাসপাতালসহ জেলার ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৩৯ জন বিভিন্ন বয়সের ডায়রিয়ার রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগই গ্রামাঞ্চলের নারী ও শিশু। শীতের প্রকোপে হান্ডা বাসি খাবার এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি খাবারে ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার কারণেই ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত গত সাতদিনে জামালপুর সদর হাসপাতালে জন ১০৯ জন, মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮ জন, মাদারগঞ্জে ৬ জন, সরিষাবাড়ীতে ৪৬ জন, ইসলামপুরে ২৫ জন, দেওয়ানগঞ্জে ১৫ জন এবং বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩০ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসরা জানিয়েছেন, ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছেন রোগীরা। ভর্তি হওয়া রোগীরা দুয়েকদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। জেলার কোথাও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী মারা যায়নি।

৫ জানুয়ারি দুপুরে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, ডায়রিয়া আক্রান্ত আটজন রোগী ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে ছয়জনই শিশু। কর্তব্যরত নার্সরা ডায়রিয়ার রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের চরমল্লিকপুর গ্রাম থেকে মাফিয়া আক্তার তার দেড় বছরের সন্তান তাওহিদকে ভর্তি করেছেন ৪ জানুয়ারি। গত দুই মাসে এই শিশুটি এ নিয়ে তিনবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। শিশুটির মা মাফিয়া আক্তার বললেন, ‘স্যালাইন খাওয়াইতাছি। ডাক্তারেও দেখে গেছে। কিন্তু কমতাছে না।’ জামালপুর সদরের চরযথার্থপুর গ্রাম থেকে দরিদ্র রমজান আলী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত তার সাতমাস বয়সী ছেলে জুয়াবয়দুলকে ভর্তি করেছেন দুই দিন ধরে। চিকিৎসা নেওয়ার পর কমতে শুরু করেছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের নার্সরা জানালেন, এখানে রোগীরা প্রয়োজনীয় সব ধরনের চিকিৎসা পাচ্ছে।

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. শফিকুজ্জামান বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, এই হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড এখন আগের চেয়ে অনেক উন্নত। সম্প্রতি ২৪টি নতুন বিছানা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় সব রকমের নতুন আসবাবপত্র দেওয়া হয়েছে। স্যালাইন থেকে শুরু করে যাবতীয় ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকে রোগীরা।

তিনি আরো বলেন, প্রচন্ড শীতের কারণেই মূলত: ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। শীতের কারণে ঠান্ডা খাবারে ভাইরাস সংক্রমিত হয় বেশি। সাধারণত গ্রামের নারী ও শিশুরাই এবার বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের মধ্যেই বাসি বা ঠান্ডা খাবার খাওয়া এবং পানি ঠান্ডার কারণে খাবারের আগে হাত না ধোয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ফলে তারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। শীতের দিনের খাবার সব সময় গরম করে এবং খাবারের আগে ভালো করে হাত ধুয়ে খেলে ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।