প্রাইভেট না পড়ায় নির্বাচনী পরীক্ষায় ফেল!

সুজন সেন
শেরপুর প্রতিনিধি, বাংলারচিঠি ডটকম

বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে নামমাত্র পাঠদান করিয়ে আমাদের প্রাইভেট পড়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। আর প্রাইভেট না পড়লে অনেক সময় ফেল করানো হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমনই অভিযোগ করেছে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ১৭টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।

জানা গেছে, চলতি মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট-এসএসসি নির্বাচনী (টেস্ট) পরীক্ষায় ঝিনাইগাতীর ১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১ হাজার ৭৯৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এরমধ্যে অনুত্তীর্ণ হয়েছে প্রায় ৩০০ জন শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ঘোষণা অনুযায়ী এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় এক বা একাধিক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এমনটি জানিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল। এর ফলে ওই ৩০০ জন শিক্ষার্থী আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে পারছে না। যে কারণে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পড়ালেখার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা জানান, এবারের নির্বাচনী পরীক্ষায় ঝিনাইগাতী সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৮৫ জনের মধ্যে ৮৫ জন, রাংটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ১১৯ জনের মধ্যে ৫ জন, হাজী অছি আমরুনেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭৩ জনের মধ্যে ৪ জন, মালিঝিকান্দা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২১৫ জনের মধ্যে ২২ জন, পাইকুড়া এ আর উচ্চ বিদ্যালয়ে ১১৩ জনের মধ্যে ১৯ জন, ঘাগড়া দক্ষিণপাড়া এফ রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৭৪ জনের মধ্যে ১৩ জন, আহাম্মদ নগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ১২৫ জনের মধ্যে ৩ জন, আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮৯ জনের মধ্যে ৩৯ জন, বনগ্রাম হাফেজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮২ জনের মধ্যে ১ জন, বনগাঁও জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১১০ জনের মধ্যে ৩ জন, একতা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬০ জনের মধ্যে ৮ জন, চেঙ্গুরিয়া আনসার আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০৫ জনের মধ্যে ৩৫ জন, বাকাকুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫০ জনের মধ্যে ২৫ জন, শালচূড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬৬ জনের মধ্যে ১৪ জন, মরিয়মনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫০ জনের মধ্যে ৬ জন, ভারুয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬২ জনের মধ্যে ৬ জন, ধানশাইল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫২ জনের মধ্যে ৬ জন শিক্ষার্থী অনুত্তীর্ণ হয়।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, আগে অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং ম্যানেজিং কমিটির ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর পাবলিক পরীক্ষার চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পেতো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এক-দুই বিষয়ে ফেল করলে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জরিমানা দিলেই নির্বাচনী পরীক্ষায় পাস নম্বর দেওয়া হতো। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ১৬ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর তপন কুমার সরকার স্বাক্ষরীত এক পত্রের মাধ্যমে জানানো হয় এবারের নির্বাচনী পরীক্ষায় এক বা একাধিক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

ঝিনাইগাতী সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক মোশারফ, রফিক, বাদল, বিল্লালসহ আরো অনেকেই জানান, তাদের ছেলে-মেয়েরা বেশির ভাগ গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে ফেল করেছে। এমন পরিস্থিতির জন্য তারা শিক্ষকদের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন তারা।

সরকারি পরিপত্র মেনে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করা হচ্ছে। এর বাহিরে কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ।