জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের রেকর্ড ধরে রাখতে চায় বাংলাদেশ

বাংলারচিঠি ডটকম ডেস্ক॥
২০০৫ সালের পর থেকে দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের কাছে কোন ওয়ানডে সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ। সেই রেকর্ড ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে ২১ অক্টোবর থেকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামছে মাশরাফির দল। সিরিজ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদি বাংলাদেশ। তবে সিরিজের শুরুটা ভালোভাবে করতে চায় টাইগাররা। অন্যদিকে, সিরিজে ভালো করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে সফরকারী জিম্বাবুয়ে। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বেলা আড়াইটায় শুরু হবে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে।

দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আটটি ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে একটি বাদে সবগুলোই জিতেছে টাইগাররা। নিজেদের মাটিতে ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বপ্রথম ওয়ানডে সিরিজে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় টাইগাররা। তবে এরপর আর কোন ওয়ানডে সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ। তাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে দুর্দান্ত রেকর্ডটি ধরে রাখার মিশন টাইগারদের।

তবে এই ধরে রাখার মিশনে বাংলাদেশকে নামতে হচ্ছে দলের দুই সেরা খেলোয়াড়কে ছাড়া। আঙ্গুলের ইনজুরির কারনে এই সিরিজে দলে নেই সাকিব আল হাসান। কব্জির ইনজুরির কারনে খেলতে পারবেন না তামিম ইকবাল। তারপরও দলের যারা আছেন, তাদের নিয়ে যে লড়াই করার যায় সেটি দেখিয়েছেন বাংলাদেশের দলনেতা মাশরাফি বিন মর্তুজা।

গেল মাসে শেষ হওয়া এশিয়া কাপে সাকিব-তামিমকে ছাড়াই ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই হাতে ইনজুরিতে পড়েন তামিম। এরপর আর কোন ম্যাচই খেলতে পারেননি তিনি। তবে হাতের ইনজুরি নিয়ে এশিয়া কাপে চার ম্যাচ সার্ভিস দিয়েছেন সাকিব। সুপার ফোরে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ থেকে মাঠে নামতে পারেননি তিনি । সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। ফাইনালে সাকিব-তামিমকে ছাড়াই দুর্দান্ত লড়াই করেছে টাইগাররা। শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ।

ঐ সিরিজের দুর্দান্ত পারফরমেন্স সাহস যোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে ব্যাট-বল হাতে জ্বলে উঠতে হবে দলের খেলোয়াড়দের। বিশেষভাবে সাকিব-তামিমের শুন্য স্থান পূরণের কাজটা দায়িত্ব নিয়েই করতে হবে মুশফিকুর রহিম-মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ-মোহাম্মদ মিথুনদের।

নতুন মুখ ফজলে মাহমুদের দিকেও চোখ থাকবে। কারন বাঁ-হাতে ব্যাটিং ছাড়াও, বল হাতে ঘুড়াতে পারদর্শী তিনি। ঘরোয়া আসরে প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে ৬৮ ম্যাচে ৭টি সেঞ্চুরি ও ১৭টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৩৭১৫ রান করেছেন ফজলে। বল হাতে ২৮ উইকেট শিকার রয়েছে তার। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৮০ ম্যাচে চারটি সেঞ্চুরি ও ১২টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ২২০০ রান করেন ৩০ বছর বয়সী ফজলে। বল হাতে ২৭ উইকেটও নিয়েছেন তিনি। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ভালো কিছু করতে পারেননি রাব্বি।

সাভারের বিকেএসপিতে অনুষ্ঠিত ঐ ম্যাচে একটি চারে ৩৪ বলে ১৩ রান করেন রাব্বি। অবশ্য বল হাতে আক্রমনে আসেননি তিনি। তারপরও সিরিজের প্রথম ম্যাচে দলে সুযোগ পেলে, বাংলাদেশের ১২৯তম খেলোয়াড় হিসেবে ওয়ানডে অভিষেক হবে ফজলের।

প্রস্তুতি ম্যাচে থেকে বাহ-বা কুড়িয়েছেন দলের বাইরে থাকা সৌম্য সরকার। তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে অপরাজিত ১০২ রান করেছেন তিনি। যাতে ৬৬ বল বাকী রেখে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) একাদশ। প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের হয়ে আরও খেলেছিলেন আরিফুল হক ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। উদ্বোধনী বোলার হিসেবে আক্রমনে এসে ৭ দশমিক ২ ওভারে ৩২ রানে ৩ উইকেট নেন সাইফ। বোলিং করেছেন আরিফুলও। ৩ ওভারে ১৪ রান দিয়ে উইকেটশুণ্য ছিলেন তিনি। ব্যাট হাতে নিজেকে বেশিক্ষণ ঝালাতে পারেননি ব্যাটিং অলরাউন্ডার আরিফুল। পাঁচ নম্বরে নেমে ১৮ বলে অপরাজিত ৯ রান করেন আরিফুল।
তামিম না থাকায় ইনিংসের শুরুতে দায়িত্ব নিতে হচ্ছে এশিয়া কাপের ফাইনালে সেঞ্চুরি করা লিটন দাসকে। এশিয়া কাপের শিরোপা নির্ধারনী ফাইনালে ১২১ রান করেন লিটন। এশিয়া কাপ শেষে প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে ফিরেই ২০৩ রানের মারমুখী ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। মিডল-অর্ডারে বাংলাদেশের ভরসার নাম মুশফিকুর-মাহমুদুল্লাহ। সাথে থাকছেন ইমরুল কায়েস ও মোহাম্মদ মিথুন।

এশিয়া কাপের শেষদিকে সুযোগ পেয়েই আফগানিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ৭২ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন ইমরুল। কিন্তু ফাইনাসহ দুই ম্যাচ খেলেও দুই অংকে পা রাখতে পারেননি তিনি। এমনকি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে একটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে মাত্র ৬ রান করেন ইমরুল। তবে ফর্মে আছেন মিথুন। এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে মহা বিপদের সময় ৬৩ রানের দায়িত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন মিথুন। পরের তিন ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরতে না পারলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরে আবারো জ্বলে উঠে মিথুনের ব্যাট। ১২ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর মুশফিকুরকে নিয়ে ১৪৪ রানের দুর্দান্ত এক জুটি গড়েন মিথুন। যেখানে তার অবদান ছিলো ৬০ রান। ঘরোয়া আসরে একটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৭২ রান করেন মিথুন। তাই রানের মধ্যে থাকা মিথুনের সার্ভিস সিরিজের প্রথম ম্যাচেও চাইবে বাংলাদেশ।

বোলিং ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবেন অধিনায়ক ও পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজা। এশিয়া কাপে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন ম্যাশ। অধিনায়কের সাথে নতুন বলে আক্রমনে থাকবেন বাঁ-হাতি মুস্তাফিজুর রহমান। কাটার মাস্টার রয়েছেন সেরা ফর্মে । এশিয়া কাপে ৫ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন ফিজ। তৃতীয় পেসার হিসেবে একাদশে সুযোগ পেতে পারেন রুবেল হোসেন। কিন্তু শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন তিনি। তাই আবু হায়দারের সুযোগ পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে দলের কম্বিনেশনের দিকে চেয়ে থাকতে হবে হায়দারকে।

স্পিনার হিসেবে একাদশে মেহেদি হাসান মিরাজের সুযোগ পাওয়া নিশ্চিত। এশিয়া কাপে বল হাতে ভালো কিছু করতে পারেননি মিরাজ। ছয় ম্যাচে মাত্র ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ফাইনালে ওপেনার হিসেবে মিরাজের ইনিংস শুরু করা ছিলো চমক। ব্যাট হাতে নেমে ৩২ রানের ছোট-সুন্দর ইনিংস খেলেন মিরাজ। স্পিনার হিসেবে মিরাজের সাথে দলে আরো আছেন বাঁ-হাতি নাজমুল ইসলাম অপু। তবে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সেরা একাদশ নিয়েই যে বাংলাদেশ খেলতে নামবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

পক্ষান্তরে চলতি বছর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একেবারেই ফ্লপ জিম্বাবুয়ে। একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ, তিনটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ ও বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে অংশ নিয়ে সাফল্যের স্বাদ পায়নি। বাংলাদেশ থেকেই এ বছর আন্তর্জাতিক লড়াই শুরু করে জিম্বাবুয়ে। শ্রীলংকার সাথে ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরু করে ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় তারা। এরপর আফগানিস্তানের কাছে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে হারে আফ্রিকার দলটি। ঐ সিরিজ হারের ক্ষত নিয়ে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে খেলতে নেমে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে তারা। বিশ্বকাপে খেলার ছাড়পত্র পায়নি জিম্বাবুয়ে। এরপর পাকিস্তানের কাছে ৫-০ ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হারে জিম্বাবুয়ে।

২০১৫ সালে বাংলাদেশের মাটিতে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে অংশ নেয় জিম্বাবুয়ে। ঐ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় তারা। তাই সাম্প্রতিক সময়ের পারফরমেন্স থেকে আত্মশ্বিাসী হবার কোন রসদই নেই জিম্বাবুয়ের। তবে এবারের সফরে সিকান্দার রাজাসহ সিনিয়র খেলোয়াড়রা দলে ফেরায় দলটি বেশ অভিজ্ঞ। তাই নিচেদের সেরা পারফরমেন্স দিয়ে টাইগারদের বিপক্ষে ভাল কিছু করতে আশাবাদী জিম্বাবুয়ে।

বাংলাদেশ দল : মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), লিটন দাস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, আবু হায়দার, আরিফুল হক, ফজলে মাহমুদ, ইমরুল কায়েস, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ মিথুন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মুশফিকুর রহিম, মুস্তাফিজুর রহমান, নাজমুল হোসেন শান্ত, নাজমুল ইসলাম ও রুবেল হোসেন।

জিম্বাবুয়ে দল : হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (অধিনায়ক), তেন্ডাই চাতারা, এলটন চিগুম্বুরা, ক্রেইগ আরভিন, কাইল জার্ভিস, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা, ব্রেন্ডন মাভুতা, সলোমন মির, পিটার মুর, তারিসাই মুসাকান্দা, রিচার্ড এনগারাভা, জন নিয়ুম্বু, ব্রেন্ডন টেইলর, ডোনাল্ড তিরিপানো, সিন উইলিয়ামস ও চেপাস ঝুয়াও।
সূত্র : বাসস