জামালপুরে ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তার মাজিদুর জেলহাজতে

মাজিদুর রহমান সজীব

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর ॥
জামালপুরে মাজিদুর রহমান সজীব নামে এক ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। তার বিরুদ্ধে একজন ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলায় ৮ আগস্ট তিনি জামালপুর সদর আমলি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানালে জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ মে জামালপুর সদর উপজেলার বেপারীপাড়া গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে মোহাম্মদ ডালিম নিজের চর্ম রোগের চিকিৎসার জন্য সদর উপজেলার হাজিপুর বাজারে মাজিদুর রহমান সজীবের চেম্বারে যান। এ সময় ডালিম পূর্বের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র মাজিদুরকে দেখান। ব্যবস্থাপত্রগুলোকে দেখে মাজিদুর তাকে অপচিকিৎসা করা হয়েছে বলে জানায়। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে মাজিদুর তার ওপর চড়াও হয়ে কিলঘুষি মেরে চেম্বার থেকে বের করে দেন। পরবর্তীতে ডালিম জানতে পারেন মাজিদুর এসএসসি পাশ না করেই ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয়ে প্রতারণা করছেন।

এ ব্যাপারে ভুয়া ডাক্তার মাজিদুরের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে ডালিম বাদী হয়ে গত ২৬ জুন জামালপুর সদর আমলি আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই অভিযোগ আমলে নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান আসামির বিরুদ্ধে সমন জারির নির্দেশনা দেন। ৮ আগস্ট মামলাটির ধার্য্য দিনে মাজিদুর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানান। আদালত শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে মাজিদুরকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাকে জামালপুর জেলহাজতে পাঠানো হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাজিদুর রহমান সজীবের বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার বেপারিপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। মাজিদুর এসএসসি পাশ না করেই নিজেকে একজন এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে হাজিপুর বাজারে ‘সজীব অল্টারনেটিভ মেডিসিন কর্ণার’ নামের একটি মিনি ক্লিনিক খুলে ৪০০ টাকা ভিজিটে চিকিৎসা ও ওষুধ বিক্রি করে আসছিলেন। তার ডাক্তারি প্যাডে এম.বি.বি.এস (এ. মেডিসিন-ইন্ডিয়া), বি.সি.বি.এম.সি (কলকাতা), এ.এম.সি.সি. (ইন্ডিয়া), সি.সি.ই.এম.ডি, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সি.এ-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা এসব পদবি ব্যবহার করা হয়েছে। একই প্যাডে তিনি নিজেকে একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও চর্ম, যৌন, বাত, প্যারালাইসিস, পাইলস্ এবং মানসিক রোগের চিকিৎসার বিশেষ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডাক্তার বলে উল্লেখ করেছেন। শুক্রবার ব্যতীত প্রতিদিন তিনি সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত রোগী দেখেন।

মামলায় উল্লেখ রয়েছে তার কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে জামালপুর সদরের কুমারপাড়া এলাকায় জহুরুল ইসলামের স্ত্রী সুফিয়া বেগম মারা যান। এ ছাড়াও বহু রোগী ও তার লোকজনরা মাজিদুরের কাছে চিকিৎসা নিয়ে প্রতারিত হয়ে আসছেন। রোগীরা প্রতারিত হওয়ার ঘটনা বাড়তে থাকায় বেশ কয়েকবার তিনি জনরোষের শিকার হলেও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।